Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

ভাষা ও সংস্কৃতি

বাংলা ভাষাসহ ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর তাদের স্ব স্ব মাতৃভাষা এবং প্রত্যেকের নিজস্ব সংস্কৃতি রয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে মোট ১১টি নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর বসতি রয়েছে। এরা হচ্ছেন মারমা, চাকমা, মুরং, ত্রিপুরা, লুসাই, খুমি, বোম, খেয়াং, চাক, পাংখো ও তংচংগ্যা । এ ১১টি জাতিগোষ্ঠির বসবাস  রয়েছে  একমাত্র বান্দরবান জেলাতে।  বান্দরবান সদর উপজেলায় বসবাসকারী উপজাতী জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংখ্যা গরিষ্ঠ সম্প্রদায় হলো ‘‘মারমা’’। তারা মূলতঃ ম্রাইমা নামে বার্মা হতে এসে বসতি স্থাপন করেছে অত্র এলাকাতে।

 

বান্দরবানের ২য় বৃহত্তর উপজাতি জনগোষ্ঠী মুরং(ম্রো)সম্প্রদায়। তাঁরা বার্মার আরাকান রাজ্য হতে অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে খুমীদের সাথে প্রচন্ড সংঘর্ষে পরাজিত হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলে এসে

বসতি গড়ে তোলে। এ জেলায় ৩য় বৃহত্তর জনগোষ্ঠী হল ত্রিপুরা। যদিও খাগড়াছড়িতে

তাঁদের সংখ্যা বেশি। ত্রিপুরারা মঙ্গোলীয় বংশোদ্ভূত। তাদের আদি নিবাস ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে। এ জেলায় তংচংগ্যা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ৭,০০০ জন। তংচংগ্যা সমাজ চাকমাদের একটি উপশাখা হলেও তাঁরা তা অস্বীকার করে নিজেদের পৃথক জাতীসত্ত্বারূপে মনে করে। এ ছাড়া বান্দরবানে বসবাসরত অবশিষ্ট ০৬টি উপজাতির সংখ্যা মোট ১৪,৩৮৯ জন। তন্মধ্যে লুসাই জাতিগোষ্ঠী প্রায় ১৫০ বছর আগে ভারতের মিজোরাম হতে পার্বত্য চট্টগ্রামে এসে বর্তমান রাঙ্গামাটি জেলার সাজেক এলাকায় কেন্দ্রিভূত হয়। খুমীরাসপ্তদশ শতাদ্বীর শেষের দিকে মায়ানমারের আরাকান অঞ্চল হতে আসে। বোমরা সংযুক্ত জাতি। তাদের আদি নিবাস বার্মার ইরাবতী ও চীনদুইন নদীর মধ্যবতী এলাকায়।

 

এ অঞ্চলের ইতিহাসে জানা যায় ১৮৩৮-৩৯ সালের দিকে তাঁরা এ অঞ্চলে আসে। খিয়াংরা অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে এ এলাকায় আসে। তাঁরা আরাকানের উমাতাং অঞ্চলে বসবাস করত। চাকরা আরাকান থেকে এ অঞ্চলে আসে। এদের আদীবাস চীনের যুনান প্রদেশে। পাংখোরা ভারতের লুসাই পাহাড় ও মিজোরাম হতে এ অঞ্চলে আসে। ইতিহাস বলে যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকাংশ উপজাতিই এসেছে পাশ্ববর্তী দেশ বার্মা, চীন, ভারতের মিজোরাম ও ত্রিপুরা রাজ্য হতে। সে কারণে এ অঞ্চলের উপজাতিদের সাথে পাশ্ববর্তী রাষ্ট্রের উপজাতি বা আদিবাসীদেরও মিল পাওয়া যায়। ঐতিহাসিক তথ্য প্রমাণ থেকে জানা যায় যে, সুপ্রাচীন কাল থেকেই পার্বত্য এলাকায় অ-উপজাতীয় জনগণের বসতি ছিল, যদিও মোঘল সুবেদার শায়েস্তা খাঁর আমলে( ১৬৬৬) তাদের দৃপ্ত পদচারণা লক্ষণীয়। ১৭৬০ সাল পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম ছিল মোগল সম্রাটের অধীন। তখন চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামসহ গোটা এলাকাটির নাম ছিল ইসলামাবাদ। ১৫১৮ সালে বাংলাদেশ ভ্রমণকারী পর্তুগীজ বনিকের বর্ণনামতে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাংলা ভাষাভাষীদের বসবাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। বর্তমানে এ জেলায় ৪৭% উপজাতি জনগোষ্ঠী এবং ৫৩% অ-উপজাতি জনগোষ্ঠীর বসতি রয়েছে।

 

১৯৪৭ সালে বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে ভারত বিভক্তি সম্পন্ন হয় এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম পাকিস্তানের অন্তর্ভূক্ত হয়। ১৯৫৬ ও ১৯৬২ সালের সংবিধানে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশেষ এলাকার মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখা হলেও ১৯৬৩ সালে সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে উক্ত বিশেষ এলাকার মর্যাদা বাতিল করা হয়। ১৯৮৯ সালে তিন পার্বত্য জেলায় স্থানীয় সরকার পরিষদ গঠিত হয়। ১৯৯৬ সালে গঠিত জাতীয় কমিটি কর্তৃক উপজাতীয় নেতাদের সাথে বৈঠকের প্রেক্ষিতে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ জেলায় বসবাসরত নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠির রয়েছে আলাদা আলাদা ভাষা ও সংস্কৃতি। এদের অনেক রীতিনীতি, কৃষ্টি, সামাজিক জীবনাচার ও গৌরবময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে মহামান্বিত ও বৈচিত্র্যময় করেছে। এক সময়ের প্রচলিত রাজ প্রথা ও রাজ পূণ্যাহ্ অনুষ্ঠান মূলত: এ জেলাতেই হয়ে থাকে।